মনসুরনগর ও ফতেহপুরে ঘরে ঘরে বিএনপির লিফলেট, নাসের রহমানের পক্ষে মাঠে তৃণমূলের সরব উপস্থিতি

November 23, 2025,

স্টাফ রিপোর্টার : শীতের সকালের নরম রোদ আপনে নামতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে রাজনগর উপজেলার মনসুর নগর ও ফতেহপুর ইউনিয়নের সরু গ্রামীণ পথগুলোতে ব্যস্ততার ছাপ—পথে পথে দেখা মিলছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। হাতে ৩১ দফা কর্মসূচির লিফলেট,আর মুখে সরব আহ্বান-ধানের শীষে ভোট দিন।

মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর রাজনগর) আসনে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এম নাসের রহমানের পক্ষে শনিবার ২২ নভেম্বর সকালে শুরু হয় ঘরে ঘরে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি।

মনসুর নগরের ইছাপুরা, শ্রীধরপুর কিংবা ফতেহপুরের পশ্চিমভাগ—যেখানেই যাওয়া যায়, দেখা মিলেছে একই দৃশ্য। চায়ের দোকানে বসে থাকা কৃষকের হাতে লিফলেট, বাড়ির উঠোনে ধান শুকাতে থাকা এক গৃহিণীর কাছে দলের কর্মসূচি তুলে দিচ্ছেন স্থানীয় যুবদলকর্মীরা। কেউ আবার রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পথচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন, বোঝাচ্ছেন দলের পরিকল্পনা, বলছেন, দেশ ঠিক জায়গায় ফেরাতে হলে পরিবর্তন দরকার, তাই আমাদের ৩১ দফা কর্মসূচিটা দেখেন। লিফলেট হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ থেমে পড়ছেন অনেকেই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি রোধ, বিচারব্যবস্থার সংস্কার, যুব সমাজের কর্মসংস্থান, কৃষি কার্ড, হেলথ কার্ড—কোন কোন দফায় চোখ আটকে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের।

মনসুর নগরের এক দোকানির ভাষায়, আগে কেউ এভাবে বসে বসে বুঝায় নাই। এখন বুঝতে পারছি বিএনপি আসলে কী করতে চায়। নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস, প্রচারণায় নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা। তাঁদের ভাষায়, জনগণের সাড়া ভাল পাচ্ছেন।

ফতেহপুর ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, নাসের রহমান শুধু প্রার্থী নন, এই এলাকার মানুষের কাছের মানুষ। তাঁর পক্ষে মাঠে নামতে আমাদের আলাদা প্রেরণা লাগে না। আরেকজন ছাত্রদলকর্মীর ভাষায়, মানুষ পরিবর্তন চায়। আমরা শুধু দরজায় দরজায় সেই পরিবর্তনের কথাটাই পৌঁছে দিচ্ছি।

এম নাসের রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, মৌলভীবাজার-রাজনগরের মানুষ খুব সচেতন। তাঁদের কাছে আমাদের ৩১ দফা কর্মসূচি পৌঁছাক—এটাই চাই। দেশের গণতন্ত্র, বিচারব্যবস্থা আর মানুষের মুক্তির প্রশ্নে এই কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ। তরুণেরা নিজ উদ্যোগে মাঠে নেমে প্রচারণা চালাচ্ছে—এটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।

মনসুর নগরের বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায় নেতাকর্মীরা বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে গৃহিণীদের হাতে লিফলেট তুলে দিচ্ছেন। কেউ ধান শুকাচ্ছেন, কেউবা হাঁসের খাবার দিচ্ছেন—তার মাঝেই শোনা যায় প্রচারণার কণ্ঠ, ভাই, ৩১ দফাটা একটু দেখবেন… দেশের জন্য জরুরি।

ফতেহপুর ইউনিয়নের রাস্তাও বিকেলের দিকে আরও সরব হয়ে ওঠে। পথচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশাচালক—সবাই লিফলেট হাতে পাচ্ছেন দলের কর্মসূচি। কেউ সঙ্গে সঙ্গে পড়ে দেখছেন, কেউ ভাঁজ করে রেখে দিচ্ছেন পরে দেখার জন্য।

লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা শুধু কর্মসূচি দেননি; গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন চলমান পরিস্থিতি, প্রত্যাশা ও সমস্যা নিয়ে। কৃষকেরা বলেছেন সারুবীজের দাম নিয়ে, ছোট ব্যবসায়ীরা বলেছেন বাজারের অস্থিরতা নিয়ে। যুবসমাজ চাকরির অভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।

এক যুবদল নেতা বলেন, মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে ৩১ দফা পড়ছেন। আমরা তাঁদের শুধু জানাচ্ছি ভবিষ্যতে বিএনপি কী করতে চায়। মনসুর নগরের বয়স্ক ভোটার আবদুল আজিজ বলেন, চলে যাওয়ার আগে ছেলেরা বসে কথা বলল, কর্মসূচিটা বুঝাইল। আগে তেমন বুঝতাম না—এখন ভালভাবে বুঝলাম।

ফতেহপুরের কয়েকজন নারী ভোটার বলেন, সব দল এলেই ভাল। আমরা পড়ব, বুঝব, তারপর ঠিক করব কাকে ভোট দেব। বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি হাতে পেয়ে অনেকেই তা আগ্রহভরে পড়ছেন। রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী থেকে শুরু করে বাড়ির উঠোনে বসে থাকা গৃহিণী—সবার মাঝেই লিফলেটটি নিয়ে কৌতূহল চোখে পড়ে।

কেউ নিজে পড়ে দেখছেন, কেউ আবার পাশে থাকা মানুষটিকে ডেকে বলছেন, এইটা শোন, ৩১ দফায় কী লেখা আছে। মনসুর নগর ও ফতেহপুরের বহু জায়গায় দেখা গেছে—একজন ভোটার লিফলেট হাতে নিয়ে দফাগুলো পড়ে শোনাচ্ছেন অন্যদের। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা-সংস্কার, বিচারব্যবস্থার পরিবর্তন, দুর্নীতি দমন ও যুব সমাজের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত দফাগুলো নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি।

স্থানীয় ভোটারদের ভাষায়, এই ৩১ দফা আসলে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার রূপরেখা। যারা দেশ গঠনের কথা বলে, তাদের পরিকল্পনাটা এভাবেই বোঝা যায়। অনেকেই বলেন, যে দল এমন বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরতে পারে, তারা দেশ পরিচালনায় কী করতে চায়—সেটা পরিষ্কার হয়।

এতে বোঝা যাচ্ছে, বিএনপির এই কর্মসূচি শুধু প্রচারসামগ্রী নয়, বরং সাধারণ মানুষের আলাপের কেন্দ্রবিন্দুর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

দিনভর প্রচারণায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা জানান, প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা করে লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক এবং ঘরে ঘরে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।

নেতাদের বক্তব্য, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে,  আমাদের লক্ষ্য—নাসের রহমানের পক্ষে একেকটি ভোট নিশ্চিত করা। রাজনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম শেলুন চলমান লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় ৩১ দফা কর্মসূচি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা তৃণমূলে একজোট হয়ে মাঠে নেমেছি। গ্রামেগঞ্জে মানুষের সাড়া খুবই আশাব্যঞ্জক। তারা পরিবর্তন ও গণতন্ত্র চায়—আমরা শুধু তাদের হাতে সেই পথনকশাটুকু তুলে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, মৌলভীবাজার-৩ আসনে এম নাসের রহমান একজন জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। তাঁর পক্ষে মানুষের সমর্থন দিনে দিনে বাড়ছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি, এবং জনগণের আস্থায় ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হবে বলে বিশ্বাস করি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com