লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রাজস্ব আদায়ে টিকেট চুরি
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দর্শনার্থীদের টিকেট ও গাড়ি রাখা বাবত আদায়কৃত রাজস্বের কোটি কোটি টাকা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অভিনব কায়দায় চুরি করেছে একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র। সম্প্রতি বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারী এই তথ্যটি উদঘাটন করেন। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতি মধ্যে দুই জনকে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে দৈনিক রাজস্ব আয়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। দেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। যার ফলে প্রতিদিন এই উদ্যানে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক। আর পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত প্রবেশ টিকেটের ও গাড়ি রাখার টাকা অভিনব কৌশলে দীর্ঘ দিন ধরে চুরি করে আসছে সরকার দলের একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র। যার ফলে সরকার হারিয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টিকেট কাউন্টারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ দর্শনার্থীদের কাছে টিকেট বিক্রি করে। ওই টিকেট আবার সংগ্রহ করে মজিদের কাছে নিয়ে আসত সিরাজুল ইসলাম। এই ভাবে ৫০টাকা মূল্যের টিকেট চক্রাকারে দর্শনার্থীদের কাছে একাধিকবার বিক্রি করত এই চক্র। পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকলে ওই চক্র নকল বই তৈরি করে দর্শনার্থীদের কাছে জাল টিকেট বিক্রি করত। পার্কিং বাবত বড় গাড়ি থেকে ভাড়া বাবত ১০০ টাকা আদায় করলেও বন বিভাগকে দেখাত ২০ টাকা আদায় করেছে। বন বিভাগ থেকে জানা যায়, যুবলীগ নেতা মজিদ ২০০৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে টিকেট কাউন্ডারের দায়িত্বে আসেন। গত নয় বছরে সে অভিনব কায়দায় মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
বর্তমানে সহব্যবস্থাপনা কমিটি’র (সিএমসি) সভাপতি হিসেবে আছেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি ও সাবেক হুইফ আব্দুস শহীদ এর ভাই কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক। উনার পূর্বে ৪ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ এমপির আরেক ভাই রহিমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার আহমদ বদরুল।
১৫ ফেব্রুয়ারী লাউয়াছড়া উদ্যানের রাজস্ব চুরির অভিযোগে যুবলীগ নেতা আব্দুল মজিদ ও সিরাজুল ইসলামকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় বন বিভাগ। এই চক্রকে অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রাজস্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা রেকর্ড পরিমাণে দাঁড়িয়েছে। তাদের অব্যাহতি দেয়ার পর যে ভাবে রাজস্ব আয় হয়েছে অতিথে কোনো দিন এত টাকা আদায় হয়নি।
এই চক্রের মূল হোতা অব্যাহ প্রাপ্ত যুবলীগ নেতা আব্দুল মজিদ অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তাহলে কেন বন বিভাগ আপনাকে অব্যাহতি দিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হিমশিম খেয়ে সিএমসির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এবিষয়ে সহকারি বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, একাধিক সোর্সের মাধ্যমে গত কয়েকদিন আগে আমরা বিষয়টি অবগত হলে বন বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তদেরকে রাজস্ব আদায় থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যেহেতু তারা দীর্ঘ যাবৎ এই চুরির সাথে সম্প্রিক্ত সেহেতু সরকার বড় অংকের রাজস্ব হরিয়েছে। তবে এই মুহুর্তে টাকার পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
সুশীল সমাজের নাগরিক দাবি, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির কাছ থেক হস্থান্তর করে সরকারী আওতায় আনা উচিৎ। তা না হলে রাজস্ব চুরির মত অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে এবং সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব হারাবে।
নাম গোপন রাখার স্বার্থে বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সিএমসি নিয়ন্ত্রণ করছেন সরকার দলের এক প্রভাবশালী নেতা। তা ছাড়া এই চক্রের দুই জনকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে ক্ষমতাশীন দলের উচ্চ পর্যায় থেকে একাধিক ব্যক্তি, সিএমসির সভাপতি সহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আমাকে ম্যানেজের চেষ্টা করছেন। যাতে মজিদ ও সিরাজকে পুনরায় চাকরিতে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এবিষয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সভাপতি ও কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক মজিদ ও সিরাজকে অব্যাহতির বিষয়টি স্বীকার করেন বলেন, তাদেরকে শুধু সিএমসি বরখাস্ত করতে পারে। যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।



মন্তব্য করুন