এপ্রিল ফুল আনন্দের নয়, বিষাদের শ্রীমঙ্গলে শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

April 1, 2018,

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ ১ এপ্রিল  রবিবার বিকাল ৫টায় শ্রীমঙ্গলে প্রত্যয় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদ কর্তৃক আয়োজিত হবিগনজ রোডস্থ সংসদের নিজ কার্যালয়ে ‘এপ্রিল ফুল আনন্দের নয়, বিষাদের’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মৌলভীবাজার জেলা আল-ইসলাহ’র সদস্য হাজী কেরামত আলীর সভাপতিত্বে ও মোজাহিদ ইসলামের পরিচালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, প্রত্যয় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন, বরুণা দাখিল মাদরাসার সুপার, মাওলানা মো. আতাউল্লাহ্, দৈনিক ইনকিলাব শ্রীমঙ্গল উপজেলা সংবাদদাতা ও হযরত শাহজালাল লতিফিয়া সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জসিম, কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডা. একরামুল কবির, মাওলানা মো. শাহজাহান আহমদ, মো. সালাউদ্দিন আহমদ। বক্তরা বলেন, পশ্চিমা দেশ গুলোতে এ দিনটি পালন করে মানুষকে বোকা বানানোর দিন বা এপ্রিল ফুল হিসেবে। এই দিন মিথ্যা বলে, ধোঁকা কিংবা কষ্ট দিয়ে এবং প্রতারণা করে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাশ্চাত্যের কায়দায় মুসলিম দেশ গুলোতে ও প্রতিবছর কিছু লোক এপ্রিল ফুল ডে পালন করে যাচ্ছে।

এপ্রিল ফুল মানে হচ্ছে, এপ্রিলের বোকা। কিন্তু কারা ছিল এপ্রিলের বোকা? স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলা চরম মুসলিম বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান স¤্রাট ফার্ডিনান্ড’কে বিয়ে করে। বিয়ের পর দু’জন মিলে সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলে স্পেন আক্রমণের। ১৪৯২ সালে স্পেনে মুসলমানদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। এর আগেই রাজা ফার্ডিনান্ড মুসলমানদের হাত থেকে কর্ডোভা’সহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করে নেয়। বাকি ছিল শুধু গ্রানাডা। গ্রানাডার শাসনকর্তা ছিলেন হাসান। খ্রিস্টানরা তার উপর চাপ সৃষ্টি করছিল, আত্মসমর্পনের জন্য। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। তাকে আত্মসমর্পনে রাজি করাতে না পেরে খ্রিস্টানরা তার পুত্র আবু আবদুল্লাহ’কে সিংহাসনে বসানোর লোভ দেখিয়ে হাত করে ফেলে। আবদুল্লাহ তাদের কথায় রাজি হয়ে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং এক সময় বাদশাহ হাসান পুত্রের সাথে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত এড়ানোর জন্য তার এক ভাইয়ের হাতে সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে দেশান্তরী হন। আবু আব্দুল্লাহ বিশ্বাসঘাতকতা করলেও তার সেনাপতি মহাবীর মুসা’সহ অনেক মুসলমান ফার্ডিনান্ড বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধচালিয়ে যেতে থাকে। এর আগে কখনো সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজিত করতে পারেনি বলে চতুর ফার্ডিনান্ড এবার পা বাড়ায় ভিন্ন পথে। তার নির্দেশে আশ-পাশের সব শস্য খামার জ্বালিয়ে দেয়া হয়। অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসে গ্রানাডা শহরে। দুর্ভিক্ষ যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন প্রতারক ফার্ডিনান্ড ঘোষণা করে, মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে।

সেদিন ছিল ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল। গ্রানাডাবাসী অসহায় নারী ও মাসুম বাচ্চাদের করুণ মুখের দিয়ে তাকিয়ে খ্রিষ্টানদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে খুলে দেয় শহরের প্রধান ফটক। সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেয় আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদে। শহরে প্রবেশ করে খ্রিষ্টান বাহিনী মুসলমানদেরকে মসজিদের ভেতর আটকে রেখে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর এক যোগে শহরের সমস্ত মসজিদে আগুন লাগিয়ে বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠে হায়েনারা। প্রায় ৪৫ লক্ষ মুসলমান’কে ঐদিন আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

১লা এপ্রিলে যেভাবে মিথ্যা বলে রসিকতা করার চেষ্টা করা হয়তা কোন ভাবেই মুসলমানদের সংস্কৃতি হতে পারে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ধ্বংস তার জন্য, যে লোক হাসানোর জন্য কথা বলে এবং তাতে সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়’।

সুতরাং এপ্রিল ফুলের নামে আমরা কেউই কাউকে প্রতারণা করবো না এবং মিথ্যার আশ্রয় নেবো না। সেমিনারে বক্তরা বলেন এই হোক আমাদের আজকের দিনের অঙ্গীকার। উক্ত সেমিনারে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা মো. ইউনুছ আলী, মাওলানা মো. মাহফুজ আহমদ, মাওলানা মো. শামছুল ইসলাম’সহ প্রমূখ। পরিশেষে শাহাদত বরনকারী মুসলমানদের মকবুলিয়াত কামনায় মোনাজাত করেন লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটির শ্রীমঙ্গল উপজেলা সভাপতি মাওলানা কাজী মো. মনির উদ্দিন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com