সামাজিক বনায়নের গাছ নিয়ে লুকোচুরি মৌলভীবাজারে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৬/৭’শ গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ
হোসাইন আহমদ॥ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আদপাশা, মাসকান্দি ও সনকাপন সড়কসহ এর আশপাশের সামাজিক বনায়নের আওতায় প্রায় ৬শত গাছ বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাশীল দলের এক নেতার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি সদর উপজেলার আমতৈল গ্রামের আব্দুল মজিদ নামের এক ব্যক্তি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গাছ বিক্রির অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন সদর উপজেলার শাহবন্দর হইতে দিঘির পাড়, ঘরোয়া, ছনকাপন, চমৎকার, আমবেলা ও কাগাবলা সংযোগ সড়কের উসমান শাহ মাজার হইতে কাগাবলা ৫৪টি লট ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল টেন্ডার নেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান তরফদার। ওই গাছগুলো এক বছরের মাথায় কেটে নেয়ার কথা থাকলেও ৩ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ৩ বছরের মধ্যে সব গাছ গুলো কেটে না নেয়ায় উপকারভোগী ও সরকার বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। অভিযোগে আরোও উল্লেখ্য করেন, বন বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মুহিতের মধ্যস্থতায় টেন্ডার না নিয়েও ওই লটের সাথে আদপাশা, মাসকান্দি ও ছনকাপন রাস্তার আকাশমনি ও মেনজিয়ামসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৫/৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৬/৭’শ গাছ কেটে নিয়েছেন তরফদার।
একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায় এখন পর্যন্ত ১২/১৩টি লটের টাকা জমা না দিয়ে বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে তরফদার সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নিয়েছেন।
অভিযোগকারী আব্দুল মজিদ বলেন, মুহিবুর রহমান তরফদার ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে গাছ বিক্রি করার জন্য আমাকে খবর দিয়ে অনুতপ্ত হয়ে বলেন, আমার বড় ছেলেকে কাজির বাজারের সৈয়দ মুর্শেদ আলী সহজ সরল পেয়ে ৯টি লটের বাহিরেও আরোও বেশ কিছু গাছ কেটে নিয়েছেন। আপনি বাকী গাছ গুলো বিক্রি করে আমাকে রাজস্ব মামলা থেকে বাঁচান। তার অনুরোধে কোনো কাগজপত্র ছাড়া পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন লট বাবত ১৪ লক্ষ ৭ হাজার ৩’শ ৫০ টাকা বন বিভাগে জমা দেই। অপরদিকে আমতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রানা খান শাহিন এর মাধ্যমে নগদ ৯ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭শ টাকা মুহিবুর রহমান তরফদারকে দেই। কিন্তু আমাকে ওই টাকার সমপরিমান গাছ না দিয়ে আমার সাথে বিভিন্ন টাল বাহানা করেন। আমার বড় ছেলে মোঃ ইব্রাহিম মিয়ার নামিয় স্ট্যান্ডার ব্যাংকের তারিখ বিহীন ১লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার একটি চেক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তরফদারকে দেয়া হয়। এসব বিষয়ে এলাকায় একাধিকবার বৈঠক হয়। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যাংক ঋণ বাবত ৩১ লক্ষ ৬ হাজার ১’শ ২৩ টাকার লোকসানের সম্মুখিন হয়েছেন। যা বহন করা উনার পক্ষে কোনো অবস্থাতে সম্ভব নয়। ঋণের টাকার কারণে গত ৩ মাস ধরে আমি বাড়ির বাহিরে আত্মগোপনে আছি।
আদপাশা, মাসকান্দি ও সনকাপন সড়কের সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নেয়ার বিষয়ে অভিযোক্ত মুহিবুর রহমান তরফদার বলেন, এটা লটের মধ্যে ছিল। টাকা জমা দিয়ে গাছ কেটে নিয়েছি। এখনও ১০টি লটের টাকা বাকী রয়েছে। আব্দুল মজিদের টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়ে তিনি বলেন, উনি চুরি করে আমার গাছ বিক্রি করেছেন। টাকাও জমা দেননি। পরে চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় কিছু টাকা জমা দিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা চস্পা লাল বৈদ্য বলেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে তারা তদন্ত করবেন। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কেউ গাছ কেটে নিতে পারবেনা। তবে তরফদার ১০টি লটের টাকা এখনও জমা দেননি। টাকা দেয়ার জন্য উনাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ হওয়া থেকে গাছ কেটে নেয়ার মেয়াদ কতদিন থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটা আমার জানা নেই।



মন্তব্য করুন