হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুয়া
আশরাফ আলী॥ পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। মানুষ বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করে। পানি রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ধোয়া-মোছার কাজে পানি ব্যবহার করা হয়। ফসল ফলাতে, মৎস খামারে এবং কলকারখানায় পানির ব্যবহার হয়। প্রতিটি খাদ্য তৈরীতে পানির প্রয়োজন। আর এ খাদ্য তৈরীতে দরকার আর্সেনিকমুক্ত পানি। এমনকি তৃষ্ণা মিটাতে দরকার সচ্ছ পানি। সচ্ছ পানির কয়েকটি উৎসের মধ্যে একটি হলো কূপ বা কুয়া।
আজ থেকে অনেক দিন আগে গ্রাম বাংলার প্রতিটি স্থানে পানির জন্য কূপ বা কুয়া ছিল। মানুষ কুয়ার পানি ব্যবহার করত। কুয়ার পানি দিয়ে মানুষ তৃষ্ণা মিটাতো। এ পানি দিয়ে রান্না-বান্নার কাজ চালাতো। কিন্তু গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আর বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায়না। কিছুদিন আগে যে বাড়িতে কুয়া ছিল সেখানে টিউবওয়েল রয়েছে। এখন প্রতিটি বাড়িতে কুয়ার বদলে টিউবওয়েল পাওয়া যায়। আবার অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক মিশিন দিয়ে পানি তুলা হয়।
এক সময় গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই খড়ের ঘর থাকত। গরমের দিনে এইসব খড়ের ঘর অপেক্ষাকৃত ঠা-া ছিল। শীতকালে এই ঘরগুলো টিনের ঘরের চাইতে কম ঠা-া ছিল। বর্তমানে বেশীর ভাগ বাড়িতে খড়ের বদলে জায়গা দখল করেছে চকচকে টিনের ঘর অথবা ইট সিমেন্টের বাড়ি। এখনকার জেনারেশনের কল্যাণে (বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কারণে) স্বস্তি বেড়েছে হয়তো সুখও বেড়েছে। কিন্তু হারিয়ে গেছে প্রাচীন ঐতিহ্য।
আগে বিকেল বেলা গ্রাম বাংলার প্রতিটি মা-বোনেরা সন্ধ্যা বেলায় কলশী নিয়ে কুয়া থেকে পানি আনত। এখন আর সে চিত্র দেখা যায়না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বর্তমানে মানুষ অনেক দূর এগিয়েছে। শহর অঞ্চলে এখন টিউবওয়েল পাওয়া যায় না। সব জায়গাতেই বৈদ্যুতিক মিশিন দিয়ে পানি তুলা হয়।
তবে গ্রামঅঞ্চলের কিছু এলাকায় কুয়ার দেখা পাওয়া যায়। মৌলভীবাজার জেলার দেওরাছড়া চা-বাগান, প্রেমনগর চা-বাগান, গিয়াসনগর চা-বাগান, রাজনগর চা-বাগান, চন্দ্রী ও বিজয়া এলাকাসহ আরো কিছু জায়গায় কুয়া দেখতে পাওয়া যায়। যদিও সেগুলো এখন আর আগের মতো ব্যবহার হয় না।
প্রেমনগর চা-বাগানের ৬নং রাধাপাশি সেকশনে গেলে একটি কুয়ার দেখা পাওয়া যায়। সেখানে কুয়াটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। চা-বাগানের শ্রমিকরা চা-পাতা তুলে সবাই এ কুয়ার পানি পান করে। অনেকে আবার দুুপুরের খাবারের সময় এ কুয়ার পানি ব্যবহার করে থাকে।
বমপিন নামের প্রেমনগর চা-বাগানের এক শ্রমিকের সাথে দেখা হলে তিনি বলেন, কোয়াটি আমার জন্মের পর থেকে দেখতেছি। বাবা রিটায়ার হওয়ার পর থেকে ৩বছর ধরে এখানে কাজ করি। যারা পাতা তুলে তারা এ কুয়ার পানি খায়। বস্তির মানুষও এ কুয়ার পানি খায়।



মন্তব্য করুন