শ্রীমঙ্গলে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

October 7, 2025,

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর সঠিক বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি সহজতর করার অঙ্গীকার করেছেন শ্রীমঙ্গলের সেবাপ্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ।

মঙ্গলবার ৭ অক্টোবর সকালে ডিজিটাল যুগে পরিবেশসংক্রান্ত তথ্যে অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অনুপ্রেরণায় গঠিত দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর যৌথ উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ সম্মলেন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিগণ এ অঙ্গীকার করেন। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এবং সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ অর্ধ-শতাধিক অংশগ্রহণকারী উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

সনাক-শ্রীমঙ্গলের সহ-সভাপতি কাজী আছমা আক্তার আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইসলাম উদ্দিন।

টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো: আবু বকর এর সঞ্চালসায় বক্তব্য রাখেন, অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য ও উপজেলা দুপ্রক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ নেসার আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য উপকমিটির আহবায়ক সাংবাদিক সৈয়দ ছায়েদ আহমেদ এবং টিআইবি’র সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন ইয়েস সদস্য ইমন গোস্বামী।

এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দ্বীলিপ কুমার বর্ধন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দাশ, উপজেলা প্রকৌশলী মো: আলাউদ্দীন,যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো, সুয়েব হোসেন চৌধূরী, আনসার ভিডিভি কর্মকর্তা মো, তোফায়েলসহ উপজেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইসলাম উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রে গুণগত পরিবর্তন ও সরকারি সেবার তথ্য মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য সরকারি অফিসসমূহের ওয়েবপোর্টালে সকল তথ্য সন্নিবেসিত করে রাখা আবশ্যক। তিনি সকল অফিসের কর্মকর্তাগণকে নিয়মিত ওযেবপের্টাল আপডেট রাখার তাগিদ দেন।

অনুষ্ঠানে সনাক টিআইবি এর পক্ষ থেকে ১৫টি সুপারিশ মালা তুলে ধরা হয়। সুপারিশ মালাগুলো হলো-সরকারের নিকট ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত অংশীজনদের মতমতের ভিত্তিতে তথ্য অধিকার আইনটির প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধারার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে আইনটিকে যুগোপোযোগী করতে হবে, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অধিকার আইনের আওতাভুক্ত করতে হবে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের আয়-ব্যয়ের বিভিন্ন খাতয়ারি খরচ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে  এবং নির্বাচন কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে সেসব তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে যথাসময়ে প্রকাশ করবে, বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার নিশ্চিতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সকল আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট জনগণের ওপর যে কোনো ধরনের ডিজিটাল নজরদারী কাঠামো বিলুপ্ত করতে হবে, তথ্যপ্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে, অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট ১৯২৩ সহ তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর সাথে সাংঘর্ষিক বিদ্যমান আইনি বিধান সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল করতে হবে। নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থি বা আইনটির কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো ধারা যাতে সংযোজিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও আধাসরকারিসহ সকল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে যথাযথ ধারণা ও তথ্য প্রদানে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অর্জনে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং তথ্য প্রদানে আগ্রহ সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, তথ্য অধিকার আইনের অধিকতর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ, জনগণ ও গণমাধ্যমের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ এবং তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের সকল নাগরিককে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহারে সচেতনতা ও সক্ষমতা সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইনানুগ স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে তথ্য কমিশন এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সকল সংস্থার নিজস্ব ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তথ্যপ্রকাশ ও প্রচারে প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা ও সক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্য তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও তদারকি বাড়ানোসহ তদারকি কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, তথ্য অধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যমকে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ, সুশীল সমাজ, তথ্য কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১ সম্পর্কে সচেতনতা এবং এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সকল সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে আরো তথ্যবহুল যেমন- নিরীক্ষা প্রতিবেদন, পূর্ণাঙ্গ বাজেট, প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তথ্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের জন্য জরিমানা ও আদায়ের পরিমাণের ওপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে হবে ও নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। এ সকল তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং ইংরেজী ও বাংলা দুই ভাষাতেই সেটা সহজলভ্য করতে হবে ও সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্যে পর্যায়ক্রমে ব্রেইল পদ্ধতিতে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com