কমলগঞ্জের উসমান নগরে ১ যুগ ধরে চলছে দেহ ব্যবসা : ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না স্থানীরা

March 15, 2018,

হোসাইন আহমদ॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উসমাননগরে শমসেরনগর-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সরকারের ৩ একর জায়গা দখল করে এক সময়ের দুর্ধর্ষ ডাকাত সহোদর ‘আ’ ও ‘বা’ অধ্যাক্ষরের এ দুই ব্যাক্তি গড়ে তুলেছেন দেহ ব্যবসার কারখানা। দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে এখানে চলছে এ অবৈধ কাজ। জেলা বাসীর কাছে এটা পতিতা বাড়ি হিসেবে পরিচিত। দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে চলে এখানে অনৈতিক কাজ। চাহিদা অনুযায়ী পতিতাদের পাঠানো হয় বাসা-বাড়িতে। পতিতাদের গডফাদার বাজিদের ভাষ্য অনুযায়ী ওই বাড়িতে ঢাকা, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের পতিতাদের পাওয়া যায়।
ডাকাতদের ভয়ে এলাকাবাসী এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও মুখ খোলে কিছু বলতে ও প্রতিবাদ করতে পারছে না। তাদের অভিযোগ, শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির কিছু কর্মকর্তার আশা যাওয়া রয়েছে এ বাড়িতে। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ওই বাড়ির মালিক ‘আ’ প্রায় সময় রাতে পুলিশের গাড়িতে দেখা যায়। পতিতা বাড়িতে গেলে পুলিশ তল্লাশী করবে কিনা পরিচয় গোপন রেখে এ প্রতিবেদক এমনটি জানতে চাইলে ‘বা’ অধ্যাক্ষর বলে “আমি পুলিশ, পুলিশ আবার কে”। তাদের ৪ বোনও ওই ব্যবসার সাথে জড়িত এবং সবাই এখানেই থাকে। ‘আ’ ও ‘বা’ অধ্যাক্ষরের অনুপস্থিতিতে তারা ওই ব্যবসা দেখবাল করে। প্রায় দেড় বছর আগে ভ্রাম্যমান আদালত ৫ নারীকে আটক করে জেল জরিমানা করে। এছাড়াও প্রায় ৩ বছর পূর্বে এক কিশোরী পতিতা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে পার্শবর্তী এলাকায় আশ্রয় চাইলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করা হয়। কিশোরীর অভিবাবক না পাওয়ায় কমলগঞ্জের তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে সমাজ সেবা ইউনিটে হস্তান্তর করা হয়।
রমরমা ওই ব্যবসা করে দুই ভাই ইতি মধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হয়েছেন। বাড়িতে তুলছেন রঙিন দালান কোটা।
একটি সূত্র জানায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হলে দীর্ঘ ৬ বছর কারাভোগের পর গত ২ বছর আগে জামিনে বাহির হয়ে ফের এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
সরেজমিন প্রতিবেদক শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় পতিতা বাড়ির গেইটে গেলে দেখা যায় ঘরের সামনে রোডের পাশে একটি দোকান রয়েছে। দোকানে নাম-মাত্র বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে কিছু মালামাল। দোকানের ভেতরে একাধিক বাতি থাকলেও বাহির অনন্ধকার। এ সময় দেখা যায়, দোকানে বসে ৪ জন তরুনী হিন্দি সিনেমা দেখছেন। বাহিরের বেঞ্চে ৩ জন পুরুষ বসে সিগারেট টানছে। নারীদের গডফাদার ‘বা’ অধ্যাক্ষর ভীতরের একজন মহিলাকে বলে প্রতিবেদককে এককাপ চা দিতে। সাথে সাথে সেজেগুজে একজন রমণী চা নিয়ে আসেন। এ সময় ‘বা’ অধ্যাক্ষর বলে লাগবেনি। প্রতিবেদকের সম্মতি পাওয়ার সাথে সাথে ভেতর থেকে ১৩/১৪ বছরের কিশোরীকে নিয়ে আসা হয় দোকানে। কিশোরীকে দেখিয়ে বলে একে দেয়া যাবে এক হাজার টাকা লাগবে। ৩০ মিনিট অবস্থান করলে দেখা যায়, ‘বা’ অধ্যাক্ষরের সাথে কথা বলে ৫ জন লোক ভেতরে ডুকেছেন। আধাঘন্টার মধ্যেও ভেতরে না ডুকায় প্রতিবেদককে এখান থেকে তাড়িয়ে দেয় তারা।
পরের দিন খদ্দর সেজে ‘বা’ এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক নম্বর থেকে কল দিয়ে আছে কিনা জানতে চাইলে সে বলে “ঢাকা, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সব জায়গার নারীরা আছে। যে কোনো সময় দেয়া যাবে এবং বাসাতেও পাঠানো যাবে।
এলাকার একাধিক বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, “ডাকাতদের ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তাদের অনৈতিক কাজের কারণে যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। জেলা ব্যাপি আমাদের এলাকা পতিতার কারখানা হিসেবে পরিচিত। তারা আরো বলেন, রাতে শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির অনেক কর্মকর্তাকে এখানে দেখতে পাওয়া যায়”।
এ বিষয়ে পতিতাদের গডফাদার ‘আ’ অধ্যাক্ষরের সাথে কথা হলে সে বলে, পতিতা ব্যবসার সাথে আমি জড়িত নয়। তাহলে কে জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে সে কিছু বলতে পারেনি। বাড়ির জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মুক্তাদির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com