বড়লেখায় তালাকপ্রাপ্ত নারীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর স্ত্রীর প্রতারণা ও চাঁদাবাজি মামলা
আব্দুর রব : বড়লেখায় বরিশালের এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ির সাথে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে নানা বিপদ-আপদ দেখিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও বাকিতে মালামাল ক্রয়সহ নানা কৌশলে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ধার নেন বিয়ানীবাজারের এক তালাকপ্রাপ্ত নারী। ঋণ নেওয়া টাকা ও বাকিতে নেওয়া পণ্যের মূল্য পরিশোধ এবং স্বর্ণালংকার ফেরত চাওয়ায় ওই মহিলা ও তার বাবা-ভাই ব্যবসায়ির কাছে প্রকাশ্যে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে।
‘তুমি এ অঞ্চলের বহিরাগত, এখানে ব্যবসা করতে হলে আমাদেরকে ৫ লাখ চাঁদা দিতেই হবে। নতুবা এখানে ব্যবসা করতে দিব না’ এমন হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে ব্যবসায়ী মাহমুদ হোসেন মামুন ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অবশেষে ভুক্তভোগি ব্যবসায়ির স্ত্রী সুরাইয়া রহমান তমা বৃহস্পতিবার ১১ সেপ্টেম্বর হুছনা আক্তার সেলিনা ও তার বাবা-ভাইয়ের বিরুদ্ধে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পরবর্তী ধার্য্য তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে মৌলভীবাজার সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সুরাইয়া রহমান তমা বড়লেখা উপজেলার গ্রামতলা গ্রামের সহির উদ্দিনের মেয়ে। প্রায় ১০ বছর পূর্বে বরিশালের বাসিন্দা মাহমুদ হোসেন মামুনের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। মাহমুদ হোসেন মামুন বেশ কয়েক বছর ধরে বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর বাজারে রসমেলা নামক মিষ্টির দোকান পরিচালনা করছেন। প্রায় দুই মাস আগে বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ কমলাবাড়ি এলাকার সাহাবুল ইসলামের মেয়ে হুছনা আক্তার সেলিনা রসমেলা থেকে পণ্য ক্রয় করেন। প্রায়ই মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টান্নসহ অন্যান্য মালামাল ক্রয়ের সুবাধে ব্যবসায়ি মামুন ও তার স্ত্রীর সাথে সেলিনা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ওই সম্পর্কের সুযোগে বাকিতে পণ্য ক্রয় ও নানা বিপদ-আপদ দেখিয়ে মামুনের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে থাকেন। সেলিনা প্রথমে ধার করা কিছু টাকা ফেরত দিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেন। পরবর্তীতে স্বামীর চিকিৎসার দেনা মেটানোর কথা বলে ২ লাখ টাকা ধার নেন এবং কথা দেন জায়গা বিক্রির টাকা পাওয়া মাত্র তা ফেরত দেবেন। পরে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাদীর মেয়ের একভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন নেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা মিলে আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কারসহ সর্বমোট ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
ব্যবসায়ী মাহমুদ হোসেন মামুন ধার নেওয়া টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ফেরত চাইলে তা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ফাঁদে ফেলতে সেলিনা তাকে কু-প্রস্তাব দেন। কিন্তু ব্যবসায়ি মামুন এতে রাজি না হওয়ায় সেলিনা হুমকি তিনি দাম্পত্য জীবনে ভাঙন ধরাবেন। এরপর ভাই কাওছার আহমদ ও বাবা সাহাবুল ইসলাম কয়েকজনকে নিয়ে ব্যবসায়ী মামুনের দোকানে গিয়ে বলপ্রয়োগ করে ৭০ হাজার টাকার পণ্য ও নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যান। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে দোকানে গিয়ে প্রকাশ্যে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। হুমকি দেন, ‘তুমি এই এলাকায় বহিরাগত। এখানে ব্যবসা করতে হলে আমাদেরকে চাঁদা দিতে হবে, নইলে ব্যবসা করতে দেব না, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াবে।’
বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারি রিপন আহমদ জানান, বিজ্ঞ আদালত বাদি সুরাইয়া রহমান তমার পিটিশন মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে মৌলভীবাজার সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।



মন্তব্য করুন